শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post
এমটিএফইর প্রতারণা 

ফেনীতে গ্রাহকের ৫০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা 

ফেনী প্রতিনিধি 

ফেনীতে গ্রাহকের ৫০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা 

অতি মুনাফার ফাঁদে ফেলে ফেনীর হাজার গ্রাহকের ৫০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে দুবাইভিত্তিক অবৈধ অনলাইন গ্যাম্বলিং ক্রিপ্টো ট্রেডিং করা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি  এমটিএফই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৫০১ ডলার বা ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে দিন শেষে ৫ হাজার টাকা লাভ দিতো অবৈধ অনলাইন গ্যাম্বলিং কোম্পানি এমটিএফই। অবৈধ কিন্তু এমন লোভনীয় আয়ের খাতে বিবেচনাহীনভাবে লগ্নিকারীদের মধ্যে আরও রয়েছেন রাজনৈতিক নেতা, প্রবাসী, প্রবাসীদের পরিবারের সদস্য, উঠতি তরুণসহ ফেনীর বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ।

এমন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলেও তারা কেউই নাম প্রকাশ করতে চাননি। তবে তাদের দেয়া তথ্যমতে, ফেনীর প্রায় হাজারখানেক মানুষ এতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। এদের মধ্যে অনেকে গয়না এবং মূল্যবান সামগ্রী বন্ধক রেখেও বিনিয়োগ করেছিলেন।  

ভুক্তভোগীদের একজন অভিযোগ করেন, গত ৫ আগস্ট শহরের একটি দামি রেস্টুরেন্টে এমটিএফইতে বিনিয়োগে উৎসাহী করে তুলতে আলোচনা ও রাতের ভোজের আয়োজন করেন কোম্পানির এজেন্ট নামে পরিচিত সালাহউদ্দিন আকবর নামে এক ব্যক্তিসহ তার সহযোগীরা। 

সেদিন রাতে ওই সভায় ২২০ বিনিয়োগকারী অংশগ্রহণ করে রাতের ভোজে অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শহরের মিজান রোডের এক বাসিন্দা জানান, সভায় মূলত বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এই বিনিয়োগকে শতভাগ নিরাপদ ও লাভজনক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা এবং ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন অবৈধ এবং নিষিদ্ধ। বেআইনি হলেও নিজেকে এমটিএফইর এজেন্ট বলে দাবি করা এবং অসংখ্য মানুষকে প্রভাবিত করার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে সালাহউদ্দিন আকবরকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার সাড়া মেলেনি। 

পরে তার হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলে তা দেখেও তিনি প্রত্যুত্তর করেননি। এরপর আরও একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

দুবাইভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম পঞ্জি মডেলে ব্যবসা করত। ভারত ও বাংলাদেশ থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিনিয়োগকারী ছিল। তবে অধিকাংশই বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী বলে অভিমত সাইবার বিশ্লেষকদের।  

বিনিয়োগকারীরা বলেন, গত ১৮ আগস্ট রাতে সব টাকা খুইয়েছেন বলে তারা নিশ্চিত হন। এর আগের ১৫ দিন টেকনিক্যাল প্রব্লেম বলে এই কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের কমিশন বন্ধ রেখেছিল। এখানে যারা টাকা দিচ্ছিলেন তারা আর টাকা তুলতে পারছিলেন না। গত বৃহস্পতিবার থেকে আর কোনো লেনদেন করা যায়নি। 

গত শুক্রবার পুরোপুরিভাবে এমটিএফই তাদের সিস্টেম বন্ধ করে দেয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেনী শহরের নাজির রোডের এক নারী গত এক বছর এই হায় হায় কোম্পানিতে ২০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছিলেন। এতদিন নিজেকে লাখপতি ভাবলেও হঠাৎ করে কোম্পানিটি লাপাত্তা হওয়ায় নিজের বিনিয়োগকৃত সকল টাকা হারিয়েছেন ওই নারী এখন দিশেহারা।

একইভাবে শহরের একজন নামকরা ব্যাংকার বন্ধুর কথা বিশ্বাস করে অতি মুনাফার লোভে অবৈধ ওই কোম্পানিটিতে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা হারিয়েছেন। ওই ব্যাংকার জানান, এ বিনিয়োগে প্রথম সারিতে রয়েছেন এমন এক বন্ধুর অনুরোধে  বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি ।

টিএইচ